বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
৩৫০০ পিস ইয়াবাসহ দুই ইয়াবা ব্যাবসায়ীকে আটক করেছে র‍্যাব ১০ ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত না হলে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না — এড. শাহজাহান মিয়া কেরাণীগঞ্জে জাকের পার্টির জনসভা ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত। কেরানীগঞ্জে চোরচক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার, ৪টি গাড়ি উদ্ধার। কেরানীগঞ্জে অটোচালক বাচ্চু হত্যা ও অটো ছিনতাই মামলায় ৪ জন গ্রেফতার।ছিনতাইকৃত অটোর ০৪টি ব্যাটারী উদ্ধার। ঢাকা জেলার ডিবি (দক্ষিন) কর্তৃক ১৫ (পনেরো) কেজি গাঁজাসহ ০১ জন নারী মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার। কামরাঙ্গীরচরে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মনি’র গণসংযোগ। ঢাকা-৭ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মনির দুর্গাপূজা মন্দির পরিদর্শন। কেরানীগঞ্জে বিভিন্ন দুর্গাপূজা মন্দির পরিদর্শন করেন । ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার। কণ্ঠশিল্পী রাকা পপি নিয়ে এলেন দূর্গা পূজোর দুইটি গানের মিউজিক ভিডিও। তরুণ ক্রিকেটারদের পাশে এনআরবি ব্যাংক পিএলসি

মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে আওয়ামী দোসর—আশ্রয়দাতা কে?

মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে আওয়ামী দোসর—আশ্রয়দাতা কে?

নিউজ ডেস্ক:-

বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও আলোচনায় এসেছে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের চাঁনপুর ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় নেতা খাইরুল বাশার পল্টু। বিগত দিনের অন্যায় অত্যাচারের মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কখনো গোপনে রাজনৈতিক বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন, আবার কখনো প্রকাশ্যে প্রভাব বিস্তার করছেন। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে—কোন শক্তি তাকে এতটা সাহস জোগাচ্ছে? পুলিশ নাকি স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কোনো অংশ?

খাইরুল বাশার পল্টুর নাম চাঁনপুর ইউনিয়ন তথা মেহেন্দিগঞ্জে অপরিচিত নয়। চাঁনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সংগঠনের গণ্ডি পেরিয়ে পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীন সময়ে সাবেক এমপি পংকজ নাথের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে তার প্রভাব ছিল অপরিসীম।

স্থানীয়দের দাবি, এমপির ছত্রছায়ায় থেকে তিনি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেন। বিএনপি ও বিরোধী দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের উপর হামলা, মামলা, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ছিল তার রাজনৈতিক হাতিয়ার। এক পর্যায়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারতেন না।

বিগত সময়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযোগের তালিকায় রয়েছে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটসহ নানান অপরাধ। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে মামলাগুলো আইনের ফাঁদে না গিয়ে ধুলোমাখা ফাইল হিসেবেই পড়ে আছে। জামিন নিয়ে পল্টু নির্বিঘ্নে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এমনকি জনসম্মুখে কার্যক্রমেও অংশ নিচ্ছেন।

এখানেই প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ—আইনের শাসন কি শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ? নাকি রাজনৈতিক পরিচয়ই তার সবচেয়ে বড় ।

 

যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, তখন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে পল্টুর নাম ছিল ভয়ের প্রতীক। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করতে না পারা, মিথ্যা মামলার শিকার হওয়া, এমনকি ব্যক্তিগত জীবনে হয়রানি—সবই পল্টুর নির্দেশে ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিএনপি সমর্থিত স্থানীয় এক নেতা বলেন, “পল্টুর ভয়ে আমরা তখন ঘর থেকে বের হতাম না। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তো দূরের কথা, প্রকাশ্যে কারও সাথে কথা বলতেও ভয় পেতাম। প্রশাসনকেও পাশে পেতাম না।

২০১৪ সালে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনায় তার নাম আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য বরিশাল জেলা উত্তর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বর্তমান সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এডভোকেট এম. হেলাল উদ্দিনের চানপুরের বাসায় হামলা ও লুটপাট ভাঙচুর হয় পল্টুর প্রত্যক্ষ নির্দেশে। এই ঘটনার পর পুরো এলাকায় তীব্র ক্ষোভ তৈরি হলেও প্রশাসনিকভাবে তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়রা মনে করেন, এই ঘটনাই প্রমাণ করে কতটা শক্তিশালী ছিল তার প্রভাব এবং আইনের ফাঁক-ফোকর ব্যবহার করার দক্ষতা।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—পল্টুর মতো আওয়ামী দোসর মামলার আসামি হয়েও জামিন নিয়ে কীভাবে এতটা দাপটের সঙ্গে এলাকায় বিচরণ করেন?

১. পুলিশের ভূমিকা:প্রশাসন প্রায়শই অভিযোগ পায় যে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও সেগুলো তদন্ত পর্যায়েই থেমে যায়।পুলিশ সক্রিয় না থাকায় মামলা কার্যকর হয় না, আর আসামিরা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ায়।

২. রাজনৈতিক সমঝোতা:বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্থানীয় বিএনপির সাথেও কি কোনো সমঝোতা হয়েছে?স্থানীয় পর্যায়ে দ্বন্দ্ব কমাতে বা স্বার্থরক্ষায় কি বিএনপির কোনো অংশও তাকে উপেক্ষা করছে?এসব প্রশ্ন এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

চাঁনপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষরা এই বাস্তবতায় হতাশ। তারা মনে করেন, আইন সবার জন্য সমান হলে একজন একাধিক মামলার আসামি কখনোই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে পারতেন না।

এলাকার লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষ যদি সামান্য ঝামেলায় জড়াই, পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু যারা বড় অপরাধ করে, তারা দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। এটা কি ন্যায়বিচার?”

পল্টুর মতো নেতাদের অস্তিত্ব প্রমাণ করে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কতটা অসুস্থ। যেখানে অপরাধ ও অপরাধীরা রাজনৈতিক ছায়ায় নিরাপদ আশ্রয় পায়। ফলে সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারায় এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আতঙ্কে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে গণতন্ত্রের ভিত্তিই দুর্বল হয়ে যায়। কারণ তখন মানুষ বুঝে যায়—ক্ষমতার সাথে সম্পর্ক থাকলেই অপরাধী নির্দোষ হয়ে যায়।

বর্তমানে খাইরুল বাশার পল্টু এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যদিও তিনি আগের মতো প্রকাশ্যে ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছেন না, তবে তার উপস্থিতি সাধারণ মানুষকে মনে করিয়ে দেয় অতীতের ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা।

সাধারণ মানুষের একটাই দাবি—আইনের শাসন নিশ্চিত করা হোক। মামলা যার বিরুদ্ধে আছে, তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয় বা আশ্রয়দাতার শক্তি আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

মেহেন্দিগঞ্জের চাঁনপুর ইউনিয়নের মানুষ তাই এখন নতুন করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন—

কে আসলে খাইরুল বাশার পল্টুর আশ্রয়দাতা?পুলিশ কি ইচ্ছাকৃতভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে?

নাকি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কোনো অংশের সাথে রয়েছে তার অঘোষিত আঁতাত?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা জরুরি। কারণ অপরাধী যেই হোক, রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে আইনের হাত থেকে রেহাই পাওয়া ন্যায়বিচারের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত © সংবাদ সবসময় - ২০২৩
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Marshal Host